বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৩ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা :
পাবনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম পাবনা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের একাংশের সাথে মত বিনিময়কালে বলেছেন পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য ও সাংবাদিকগন জাতিয় মানের ও মর্যাদাবান। এ মন্তব্য পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে জেলায় কর্মরত সাংবাদিক ও সুশিল সমাজের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসক এমন সময় মত বিনিময় সভা ও মন্তব্য করেছেন, যখন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয় তথ্য অধিদপ্তরের একটি তদন্ত দল পাবনায় তদন্ত কাজ করছেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম এর সাম্প্রতিক বক্তব্যে পাবনায় কর্মরত সাংবাদিকগণ ফুসে উঠেছে। গত শনিবার দুপুরে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং শনিবার দুপুরেই তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সাথে জেলা প্রশাসকের বৈঠকের নির্ধারিত সময় ছিল।
দৈনিক খোলা কাগজের পাবনা জেলা প্রতিনিধি হুমায়ুন কবির বলেন, তথ্য মন্ত্রনালয়ের তদন্ত কাজ চলাকালে জেলা প্রশাসক এমন মতবিনিময় সভা আহবান করে তদন্ত দলকে প্রভাবিত করেছেন। এমন ঘটনার জন্য তিব্র প্রতিবাদ জানান। যেখানে বৈষম্যবিরোধী সাংবাদিক সমাজের আবেদনের প্রেক্ষিতে তথ্য মন্ত্রনালয়ের গঠিত তদন্ত দল তদন্তের জন্য পাবনায় এসেছেন এবং তদন্ত দলের আগমনের বিষয়ে পাবনার জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করেছেন প্রধান তথ্য অফিসার মোঃ নিজামুল কবির। জেলা প্রশাসক তদন্ত চলাকালিন সময়ে পাবনা প্রেসক্লাবের আংশিক সদস্যদের নিয়ে মতবিনিময়ের আয়োজন করে, তদন্ত দলকে প্রভাবিত করেছেন বলে মনে করেন এই সাংবাদিক।
স্থানীয় দৈনিক খবর বাংলার প্রকাশক শামীম আহম্মেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তদন্ত চলাকালে জেলা প্রশাসকের এমন মতবিনিময় সভা আহবান করা তদন্ত কাজকে বাধা প্রদানের শামিল।
মোহনা টেলিভিশনের পাবনা জেলা প্রতিনিধি হুজ্জাতুল্লা হীরা বলেন, তদন্ত চলাকালে বিতর্কিত প্রেসক্লাবের সদস্যদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা ঠিক হয়নি। এটা জেলা প্রশাসকের উদ্দেশ্য প্রনেদিত কাজ। যা পাবনায় কর্মরত সকল সাংবাদিকগণ ব্যাথিত হয়েছেন। যেখানে পাবনা প্রেসক্লাবের গত ৫ আগষ্টের পুর্বের কর্মকান্ড নিয়ে বিতর্কিত এবং প্রেসক্লাবের সদস্যরা ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের বিটিম হিসাবে কাজ করেছে, সেই সকল সাংবাদিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করার মানে ফ্যাসিষ্টদের পক্ষ নেওয়ার শামিল।
এটিএন বাংলার পাবনা জেলা প্রতিনিধি মোবারক বিশ্বাস তার ভ্যারিফায়িড ফেসবুকের পোস্টে আক্ষেপ করে লিখেন, যেখানে পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ধর্ষন ও ভ্রæন হত্যার মত মামলা চলমান, আরেক সদস্য মাদক মামলার আসামী। পাবনা প্রেসক্লাবের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি প্রতিনিয়িত প্রেসক্লাবে মাদকের আসর বসানোর কারনে প্রেসক্লাবের একটি অংশ ক্লাব বিমুখ, প্রেসক্লাবের কতিপয় সদস্য দুর্নিতীর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন, প্রেসক্লাবের বিদ্যুতের প্রায় কোটি টাকার বিল আত্মসাত এবং প্রেসক্লাবের লিজের ১২ লাখ টাকা বকেয়া রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, সেই সকল প্রেসক্লাবের সদস্যদের নিয়ে, তদন্ত চলাকালে তদন্ত কমিটির সামনে, বির্তকিত পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্যদের নিয়ে, জেলা প্রশাসকের মত বিনিময় সভা করা মানে, অভিযুক্তদের অভিযোগ থেকে রক্ষা করার কৌশল মনে করেন। তিনি পাবনা জেলা প্রশাসকের এহেন কার্যক্রমের তিব্র সমালোচনা করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলামকে পাবনা থেকে প্রত্যাহারে আহবান জানান প্রধান উপদেষ্টার কাছে। বৈষম্যবিরোধী সাংবাদিক সমাজের নেতা-কর্মীরা তদন্ত কাজ চলাকালে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভার নিন্দা জানান, সেই সাথে পাবনা প্রেসক্লাবের ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের মদদপুষ্ট ও সহায়তাকারী দুর্নিতীবাজ সদস্যদেরকে “জাতিয় মানের ও মর্যাদাবান” সাংবাদিক বলায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তদন্তকালে অভিযুক্তদের নিয়ে জেলা প্রশাসক সাহেবের মতবিনিময় সভা করা ঠিক হয়নি। অভিযুক্তদের নিয়ে মত বিনিময় সভা করার ফলে তদন্ত কাজে প্রভাবিত এবং বিঘিœত করা হয়েছে বলে মনে করেন পাবনার প্রবীন আইনজীবি এ্যাডভোকেট সনৎ কুমার। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুশিল সমাজ বলেন, পাবনা প্রেসক্লাব বিগত দিনে বাণিজ্য মেলার নামে র্যাফেল ড্র, অশ্লিল নৃত্য এবং জুয়ার আসর বসিয়ে যে অপকর্মের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা সকল সাংবাদিক সমাজকে হেয় করা হয়েছে। যেখানে সাংবাদিকগণ এসব কাজে বাধা প্রদান করবেন, সংবাদ প্রকাশ করবেন, সেখানে তারাই এসব অপকর্ম করেছেন। এসব কারনে পাবনার ঐতিহ্যবাহি প্রেসক্লাবকে বির্তকিত করা হয়েছে। আমরা পাবনাবাসী পাবনা প্রেসক্লাবের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির এহেন অপকর্মের জন্য নিন্দা ও ঘৃনা জানাই। ভবিষ্যতে পাবনা প্রেসক্লাবের নামে এমন অপকর্ম করে কেউ যাতে পার পেতে না পারে এ ব্যাপারে পাবনার সুশিল সমাজসহ প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।